ঢাকা সাভারের আশুলিয়ায় জাতীয় শোক দিবসে বন্ধের নোটিশ দিয়েও ফ্যাক্টরি চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ

নিউজ ডেস্কঃ ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় ইপিজেড সংলগ্ন পলাশবাড়ী এলাকায় বন্ধের নোটিশ দিয়েও সিএনসি কামাল স্পিনিং কারখানাটি খোলা রাখা হয়। দিনভর সেখানে শিফট ভাগ করে কাজ করেছে শ্রমিকেরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় পতাকা টাংগিয়ে যথারীতি কারখানাটিতে কাজ করা হচ্ছে। সকল মেশিনগুলো চলছে। শিফট শেষ হলে নিয়মমতো কর্মরত কর্মকর্তা এবং শ্রমিকেরা বের হচ্ছেন, নতুন শিফটে কর্মরতরা  আসছেন। অথচ অফিসিয়ালি কারখানাটি বন্ধ দেখানো হচ্ছে।
কারখানার অফিস সিকিউরিটি সেকশনেও সকলকে কর্মরত দেখা গেছে। সেখানে কয়েক শিফটে কর্মরত কর্মকর্তাদেরকেও  যথারীতি সিগনেচার করে ঢুকতে ও বের হয়ে যেতে দেখা গেছে।
 স্পিনিং মিলটির সিকিউরিটি তে কর্মরত সুপারভাইজত সুমন প্রতিবেদকের পরিচয় জেনে এডমিন সেকশনের ব্যবস্থাপকের সাথে দেখা করিয়ে দিবে বলে অপেক্ষা করতে বলে। কিন্তু সে নিজের মোবাইলে আবু তাহের নামে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সাথে এই প্রতিবেদকের কথা বলতে দেয়।
মুঠোফোনে আবু তাহের বলেন, আপনারা কেন এসেছেন, আর এখানে কি কাজ? নিজের পরিচয় দেবার পরে তিনি এই প্রতিবেদককে নিজের দলীয় কিছু পরিচয় জানিয়ে ব্যস্ত আচগেন বলে কল কেটে দেন। এই ফ্যাক্টরিটি নাকি তার মাধ্যমেই দেখাশুনা হয় বলে জানায় সুপারভাইজর সুমন।
সিএনসি কামাল স্পিনিং এর ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান তখব কারখানার বাইরে থাকায় ফায়ার এন্ড সেফটি ইনচার্জ কথা বলতে আসেন। এই কর্মকর্তা ভিডিও বক্তব্য দিতে রাজী হন এবং তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ফ্যাক্টরি আসলে কাগজে-কলমে বন্ধ আছে। এসময় তিনি বন্ধের নোটিশও প্রতিবেদকের সামনে উপস্থাপন করেন।
তবে জাতীয় শোক দিবসে সরকারি নিয়মে অন্য সকল কারখানাগুলো বন্ধ থাকার পরও এই কারখানাটি কেনো খোলা রাখা হলো? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে শ্রমিকদের আবেদনের ভিত্তিতেই একদিন ছুটি বেশি নিয়ে বন্ধের এই দিনটিতে কাজ করে এটা পরবর্তীতে এডজাস্ট করা হবে বিধায় আজ (১৫ আগস্ট) কারখানা খোলা রাখা হয়েছে।
তবে  বিষয়টি কর্মরত শ্রমিকদের কাছে জিজ্ঞাসা করার জন্য কাউওকে তিনি প্রতিবেদকের সামনে আনেন নাই  এবং এই সংক্রান্ত শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বক্তব্য কিংবা  লিখিত কোন আবেদন ম্যানেজমেন্ট এর পক্ষ থেকে তিনি এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদককে দেখাতে পারেন নাই।
মুঠোফোনে সিনিয়র ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান এর কাছে জাতীয় শোক দিবসে বন্ধের নোটিশ দিয়েও কারখানা কেন খোলা রাখা হলো জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আসলে অফিসিয়ালি আজ আমাদের কারখানা বন্ধ কিন্তু শ্রমিকদের দাবির ভিত্তিতে আমরা আজকের এই বন্ধের দিনটিতে কাজ করিয়ে নিয়েছি আরো একদিন ঈদের ছুটি বেশী দেবার জন্য।
তখন তাকে প্রশ্ন করা হয় যে অন্তত আজকের এই জাতীয় শোক দিবসটিতে শ্রমিকদের নিয়ে ম্যানেজমেন্ট এর পক্ষ থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে কোন ধরনের দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা তো আপনারা করতে পারতেন, কিন্তু সেটা না করে যথারীতি অন্যান্য দিনের মত খোলা রেখেছেন। আর খোলা রাখা হলেও আপনারা কেন বন্ধের নোটিশ দেখিয়েছেন?  এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি তেমন কিছু বলতে পারেননি।
সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আবু তাহের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি
প্রথমেই প্রতিবেদক এর পরিচয় জানতে চান এবং পরে
সাভার এবং ঢাকা জেলা আওয়ামীলীগের তিনি কখন কি ছিলেন, বর্তমানে কোন পদে এসব জানান। এই কারখানার সাথে তার কিসের সংশ্লিষ্টতা  এবং তিনি তখন কেন ফোনে অনুসন্ধানী প্রতিবেকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন?- এ বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বাড়ি ওখানে এবং এই কারখানাটি তার চোখের সামনে তৈরী হয়েছে।তিনিই মূলত এর তত্ত্বাবধান করছেন।
তিনি আরও জানান,  ফ্যাক্টরি বন্ধ দেখানো হলেও কিছু সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে বায়ারের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে জরুরি শিপমেন্টের জন্য।
প্রসংগত উল্লেখ্য, কারখানা খোলা রাখার বিষয়ে সিনিয়র ব্যবস্থাপক এবং তথাকথিত তত্ত্বাবধানকারী এই সাভার উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতার বক্তব্যের অমিল অনুসন্ধানী প্রতিবেদকের সামনে স্পষ্ট হয়।
এ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করালেও তিনি কোনো মন্তব্য না করায় এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নাই।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment